আমার ভবনের কয়েকটি জায়গায় ক্র্যাক দেখা দিয়েছে। কি করবেন বলুন তো? আচ্ছা ক্র্যাক কেন হয়?” এরকম প্রশ্ন প্রকৌশলীদেরকে প্রায়ই শুনতে হয়। এই প্রশ্ন করাটা যেমন সহজ কিন্তু এর উত্তর দেওয়াটা তেমনি কঠিন।

                                         আসুন তাহলে ক্র্যাক নিয়ে জানা যাক 

ইংরেজিতে ক্র্যাক (Crack) শব্দের বাংলায় অর্থ করলে দাঁড়ায় ‘ফাটল বা চিড়’। যেকোন ভবনেই বিভিন্ন ধরনের ফাটল দেখা দিতে পারে। তবে সব ফাটল দেখেই দুশ্চিন্তায় পড়বার কোন কারণ নেই। ফাটল টা দেখে সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন এটা আসলে কোন ধরণের ফাটল।

#কত_প্রকার????
ফাটল সাধারণত দুই ধরণের হতে পারেঃ ১) কাঠামোগত ফাটল, ২) অকাঠামোগত ফাটল

#কাঠামোগত ফাটলঃ
যদি কোন ভবনের বীম, কলাম, ছাদ কিংবা কঙ্ক্রীট দেওয়ালের মধ্যে ফাটল দেখা দেয় তাকে প্রকৌশলীরা কাঠামোগত ফাটল (Structural Cracks) বলে থাকেন।
এই ধরণের ফাটল যেকোন ভবনের জন্য ঝুকির কারন।

#কেন হয়??
প্রকৌশলীরা সাধারণত কাঠামগত ফাটলের জন্য
ক) ডিজাইন জনিত ত্রুটি
খ) নির্মানজনিত ত্রুটি
এই দুই ধরণের কারনগুলো কে দায়ী করে থাকেন। নিচে এই ত্রুটিদ্বয়ের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেয়া হলঃ

#ডিজাইন জনিত ত্রটিঃ

১.আর্কিটেক্ট যে ড্রয়িং প্রণয়ন করেছেন স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার সেটিকে সঠিকভাবে মুল্যায়ন করে ভবনের কাঠামোগত আচরণ যদি বুঝতে না পারেন।
ভবনের উপর আগত লোড ধরার ক্ষেত্রে ত্রুটি, সঠিকভাবে পার্শ্বিয় লোড (যেমনঃ বাতাস, ভুমিকম্প) ধরার ক্ষেত্রে ত্রুটি এবং ভবনটি কি কাজে ব্যবহৃত হবে সে সম্পর্কে ধারণা না থাকলে ভবনটিকে সঠিকভাবে মুল্যায়ন করে ডিজাইন প্রণয়ন করা সম্ভব হয়না ।

২. অনেকসময় দেখা যায় যে, বাড়ির মালিক প্রকৌশলী বা স্থপতি কে ভবনের ব্যবহারের বিষয়টি একভাবে বলছেন আর বাস্তবে ব্যবহার করছেন আরেক ভাবে। যেমন বাড়ির মালিক হয়ত ভবনের নকশা প্রণয়নের সময় বলেছেন যে, ভবনটি বাসাবাড়িতে মানুষ থাকার জন্য ব্যবহৃত হবে কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল ভবনটি গার্মেন্টস, ব্যাংক বা অফিসের কাজে ভাড়া দিয়ে দিচ্ছেন। এই সমস্ত ত্রুটির কারনে অতিরিক্ত লোড বীম-কলাম কে বহন করতে হয়। ফলে বীমের মধ্যে ফ্লেক্সারাল ক্র্যাক বা সিয়ার ক্র্যাক এবং কলামের মধ্যে বাঁকলিং জনিত ক্র্যাক দেখা দেয়।

৩.ভবনের ফিনিশিং কাজ করার সময় বাড়ির মালিক দামী-দামী টাইলস, বাথরুম বা কিচেনের স্যানিটারি মালামাল এবং ইলেক্ট্রিক্যাল সুইচ-সকেট ব্যবহার করেন। কিন্তু বাড়ি তৈরী করার আগে যে মাটি পরীক্ষা করা প্রয়োজন সেদিকে নজর দেন না। যে মাটির উপর এত বিশাল ভবনটি দাড়িয়ে থাকবে সেই মাটি পরীক্ষা করতে যে অর্থের প্রয়োজন তা ভবনের নির্মান খরচের তুলনায় খুবই কম। কিন্তু এই পরীক্ষার ফলাফলটি যদি হাতে না থাকে বা পরীক্ষাটি যদি সঠিক জায়গা থেকে না করা হয়ে থাকে তাহলে মাটির বিয়ারিং ক্যাপাসিটি, সেটেলমেন্ট এবং অন্যান্য গুনাগুন সম্পর্কে ধারনা করতে পারা যায় না। সুতরাং সেই ভবনটিতে সঠিক ভিত্তি-প্রস্তরের পদ্ধতি অনুসরণ করা সম্ভব হয় না। ফলে মাটি উক্ত ভবনের চাপ সহ্য করতে না পেরে নিচে দেবে যেতে পারে। এতে করে ভবনে ফাটল দেখা দিতে পারে।

৪.ভবনের বীম, কলাম, ছাদ কিংবা কঙ্ক্রীট দেওয়ালের মধ্যে ব্যাবহৃত রডের ডিটেইলিং ঠিকমত না করলে ভুমিকম্প বা বাতাসের জন্য সৃষ্ট অতিরিক্ত লোডের কারনে ভবনের ফাটল দেখা দিতে পারে।

অনেক সময় দেখা যায়, স্থপতি বা বাড়ির মালিক ভবনের স্ট্রাকচারাল নকশা প্রণয়নের সময় বাড়ির মমালিক প্রকৌশলীকে চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন তার মত করে ডিজাইন করতে। প্রকৌশলী যদি বিল্ডিং কোড মেনে ভবন নির্মাণ না করেন ভবনে কোন না কোন সময় ফাটল সৃষ্টি হতে পারে।

৫.অমুক ইঞ্জিনিয়ার ছয় তলা বিল্ডিং এত টন রড দিয়ে ডিজাইন করেছে আপনিও এই ভবনটি এত টন রড দিয়ে ডিজাইন করে দেন। অমুক ইঞ্জিনিয়ার আরেকটি ছয়তলা বিল্ডিং এর জন্য পাইল দেয় নাই আপনি এতটুকু বিল্ডিং এর জন্য পাইল দিলেন।', অনেকসময় প্রকৌশলীদের এইসব কথা শুনতে হয়। মানুষের হাতের রেখা যেমন ভিন্ন ভিন্ন তেমনি বিভিন্ন জায়গাতে নির্মিত বিভিন্ন ধরনের ভবন ও মাটি ভিন্ন ভিন্ন। সুতরাং একটি ভবন এর সাথে অন্য ভবন এর তুলনা পুরোপুরি চলে না। বিল্ডিং কোডের নিয়মানুযায়ী ব্যালেন্সড স্টীল রেশিও বা রডের সাম্যতার অনুপাতের বেশি রড ব্যবহার করা ঠিক নয়। সুতরাং প্রকৌশলীগণ সাধারণত বেশি পরিমাণ রড ব্যবহার করতে চায় না। কিন্তু লোডের কারণে কোন বীমের ডিফ্লেকশন বা কলামের বাকলিং ঠেকানোর জন্য তার সাইজ বাড়ানোর প্রয়োজন হয়। স্থাপত্যের কারণের যদি সাইজ না বাড়িয়ে রডের পরিমান বাড়ানো হয় তবে সেটার কারণে ডিফ্লেকশন কমানো সম্ভব হবে না। ফলে ভবনে ফাটল ধরতে পারে।

৬. বীম ও ছাদের সংযোগস্থলে ছাদের মধ্যে কর্ণার রড ব্যাবহার না করলে ছাদে টরশোন জনিত মোমেন্ট সৃষ্টি হয়। যার কারনে ছাদে ফাটল দেখা দেয়।।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url