ছোট ৪-৫ তলা বিল্ডিংয়ের কোন স্ট্রাকচারাল ডিজাইন দরকার নাই
অনেক সময় আমরা মনে করি ছোট ৪-৫ তলা বিল্ডিংয়ের কোন স্ট্রাকচারাল ডিজাইন দরকার নাই। এটা মিস্ত্রীরাই করে ফেলতে পারবে। ভূমিকম্পে তেমন সমস্যা হবেনা। আসলেই কি এতো ছোট বিল্ডিংয়ের জন্য ভূমিকম্প সহনীয় ডিজাইনের দরকার আছে?
ভূমিকম্পে বিল্ডিংয়ের রেসপন্স কেমন হবে সেটা অনেকগুলা ফ্যাক্টরের উপর নির্ভর করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটা ফ্যাক্টর হল বিল্ডিংয়ের ন্যাচারাল টাইম পিরিয়ড বা প্রাকৃতিক পর্যায়কাল। এটা সহজভাবে বুঝতে গেলে, আমরা ছোটবেলায় যে দোলনায় চড়েছি তার কথা বলা যায়। একটা দোলনাকে ধাক্কা দিলে একবার দুলে আবার আগের জায়গায় ফেরত আসতে যে সময় লাগে সেটা হচ্ছে সেই দোলনের টাইম পিরিয়ড বা পর্যায়কাল। প্রথম প্রথম দোলনাকে একটু জোরে ধাক্কা দিতে হয়। পরে একসময় দেখা যায় জাস্ট অল্প একটু ধাক্কা দিলেই দোলনা অনেক জোরে দুলছে। এটাকে বলে রেজোনান্স বা অনুনাদ। অর্থাৎ আমাদের ধাক্কার পর্যায়কাল আর দোলনার পর্যায়কাল এক হয়ে গেছে। তাই এটা সর্বোচ্চ গতিতে দুলছে।
তো এইভাবে সব বস্তুরই পর্যায়কাল রয়েছে। এবং দুটো বস্তুর পর্যায়কাল এক হয়ে গেলে এরা সর্বোচ্চ গতিতে দুলতে থাকে।
বিল্ডিংয়ের প্রাকৃতিক পর্যায়কাল কে সরলীকরন যদি করা হয় তাহলে এটা বিল্ডিংয়ের উচ্চতার সাথে সম্পর্কিত। যদিও প্রকৃত পর্যায়কাল বিল্ডিংয়ের ভর ও স্টিফনেসের উপর নির্ভর করে এবং অনেক সফিস্টিকেটেড রেশনাল অ্যানালাইসিসের মাধ্যমে বের করতে হয়।
তো একতলা বিল্ডিংয়ের পর্যায়কাল ০.১ সেকেন্ড, দোতলার ০.২ সেকেন্ড…ছয়তলার ০.৬ সেকেন্ড। প্রতি তলার জন্য ০.১ সেকেন্ড করে বাড়ে। এটা হল একটা থাম্বরুল এবং একদম সরলীকরন। যদিও বাস্তবের বিল্ডিংয়ের ক্ষেত্রে এটা বিভিন্ন ফাক্টরের উপর নির্ভর করে বের করতে হয়।
ভূমিকম্পের সময় বিল্ডিং যে কম্পন অনুভব করে তা বিল্ডিংয়ের নিচের মাটির মাধ্যমে। তাই বিল্ডিংয়ের নিচের মাটির ও বিল্ডিংয়ের মৌলিক পর্যায়কাল একই হয়ে গেলে বিল্ডিংটি সর্বোচ্চ গতিতে দুলতে থাকে। ভূমিকম্পজনিত প্রভাব ওই বিল্ডিংয়ে তত বেশী হয়।
সাধারনত মাটির পর্যায়কাল ০.৪ সেকেন্ড থেকে ২ সেকেন্ড হয়। তো এই মাটির পিরিয়ড হচ্ছে ৪ থেকে ২০ তলা বিল্ডিংয়ের পিরিয়ডের রেঞ্জ। তাই এই রেঞ্জের বিল্ডিংগুলা ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশী আন্দোলিত হবে।
১৯৮৫ সালের মেক্সিকো সিটি ভূমিকম্পে দেখা যায় যে, সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৬ থেকে ২০ তলা বিল্ডিংগুলা। এই ভূমিকম্পে মৃতের সংখা ১০০০০ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ভূমিকম্পের উৎপত্তি স্থল ছিল মাত্র ২৫০ কিলোমিটার দূরে। আর বিল্ডিংগুলো ছিল একটা পুরাতন লেক ভরাট করা নরম মাটির উপর। মাটির পর্যায়কাল ও বিল্ডিংগুলোর পর্যায়কাল কাছাকাছি হওয়ায় এই ভূমিকম্পে অল্প উচ্চতার বিল্ডিং গুলা ক্ষতিগ্রস্ত হয় বেশী। বেশী উঁচু বিল্ডিংগুলাতে সামান্য পরিমান ডেমেজ হয়েছিল।
তাই বিল্ডিংয়ের সাইসমিক ডিজাইনের ক্ষেত্রে এই টাইম পিরিয়ড বা পর্যায়কাল খুব গুরুত্বপূর্ন ক্রাইটেরিয়া। ছোট বিল্ডিং হলে তার প্রপার স্ট্রাকচারাল ডিজাইন লাগবেনা – এই ধারনা থাকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে।
তথ্যসূত্রঃ
1. Federal Emergency Management Agency (FEMA), USA
2. International Code Council, USA
3. Building Seismic Safety Council, USA